নামাজ কি, মানুষের জীবনে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

 আমরা প্রত্যেক মুসলমানরাই জানি যে, নামাজ আল্লাহর তরফ থেকে আসা এমন এক নির্দেশনা যা সকল বালক বালেগা মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ অর্থাৎ অত্যাবশ্যকীয়। ইসলামের পাঁচটি কাঠামো যথা-কালেমা, নামাজ, যাকাত, রোজা, হজ্ব।

ইমেজ

 এই পাঁচটি অত্যাবশ্যকীয় স্তম্ভের মধ্যে একমাত্র নামাজ হচ্ছে এমন একটি ইবাদত, যা কোন অবস্থায়ই ছেড়ে দেবার কোন অবকাশ নেই। প্রত্যেক মুসলিম নর নারীকে এই ইবাদত পালন করতেই হবে। কেননা একমাত্র নামাজ হচ্ছে "মুমিন এবং মুনাফিকের মধ্যে ব্যবধানকারী"।

পোস্ট সূচিপত্রঃ-

মানুষের জীবনে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আলোচনা

 আমরা সকলেই জানি যে নামাজ এমন একটি ইবাদত, যা প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য অত্যাবশ্যকীয়। আমাদের সর্বশেষ, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী এবং রাসূল আমাদের প্রাণের প্রিয় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামের উপর নাযিল হওয়া মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বাণী আমাদের জন্য এই দিক নির্দেশনা নিয়ে এসেছে স্বয়ং আল্লাহর তরফ থেকে। আল কুরআনের বাণী আমাদের জন্য যে সকল দিক নির্দেশনা নিয়ে এসেছে তার মাঝে একমাত্র নামাজকেই সর্বস্তরের সকল মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। যে নামাজের কোন বিকল্প নেই। কেননা নামাজই একমাত্র ইবাদত, যা বান্দাকে সকল প্রকার পাপ থেকে বিরত রাখতে সর্বশ্রেষ্ঠ  ভূমিকাপালন করে।

 একমাত্র নামাজ বান্দার জন্য ইহকালীন এবং পরকালীন কল্যাণের পথ নিশ্চিত করে। এই নামাজের মাধ্যমেই বান্দা এবং আল্লাহর মধ্যে সকল দূরত্ব দূরীভূত হয়। যেটা আর কোন ইবাদতের মাধ্যমে সম্ভব নয়। কেননা কুরআন হাদিসের আলোকে আমরা জানতে পেরেছি যে, জিব্রাইল আলাইহিইস সালাম আমাদের জানিয়েছেন, উনার ৭০ হাজার ডানা থাকার পরেও উনি যে দূরত্ব অতিক্রম করতে পারেননি স্বয়ং আল্লাহ তায়ালার কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে। অথচ নামাজ একমাত্র এমন একটি ইবাদত যে ইবাদত, অর্থাৎ সিজদার মাধ্যমে আমরা সেই দূরত্ব অতিক্রম করে স্বয়ং আল্লাহর কাছাকাছি যেতে পারি।

 আর তাছাড়া শারীরিক সক্ষমতা, অর্থনৈতিক অবস্থা এবং আরো বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে ইসলামের মূল স্তম্ভের আরো অন্যান্য ইবাদতগুলো সকলের ওপর ফরজ না হলেও, নামাজকে সর্বস্তরের সকল মুসলিমের উপরে আল্লাহ তায়ালা যেভাবে বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন এ থেকেই বোঝা যায় যে নামাজ আমাদের ইহকালীন এবং পরকালীন মুক্তির জন্য নামাজের কি পরিমান গুরুত্ব এবং ফজিলত। আর তাছাড়া আমাদের প্রাণের প্রিয় রাসূল, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ইস সালাম আমাদের জানিয়েছেন যে, একমাত্র নামাজই হচ্ছে মুমিন এবং কাফিরদের মধ্যে ব্যবধানকারী। সুতরাং এই কথা থেকেই আমরা বুঝতে পারি যে আমাদের জীবনে নামাজের গুরুত্ব এবং ফজিলত অনস্বীকার্য।

মানুষের জীবনে ফজরের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

 আমাদের মহাগ্রন্থ আল কুরআন এ পরম করুনাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ আমাদের জন্য যে জীবন বিধান পাঠিয়েছেন। সেখানে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বা নামাজ আমাদের জন্য ফরজ অর্থাৎ বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। আর এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের এক একটি সালাত একেক রকম ফজিলত দ্বারা আল্লাহ তায়ালা পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। আর এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে ফজরের সালাত হচ্ছে প্রথম সালাত। যা প্রত্যেকটি মুসলিম নর-নারীর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন ওনার যে বান্দা ফজরের সালাত আদায় করল তিনি যেন সারাদিনের জন্য আল্লাহর জিম্মায় চলে গেলেন। এছাড়া ফজরের সালাত বান্দার চেহারার উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে দেয়।

 আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন যে, ফজরের নামাজ কেয়ামতের দিন নূর হয়ে দেখা দেবে। রাতের আঁধারে যারা ফজরের সালাতের উদ্দেশ্যে মসজিদে হেঁটে যায় এবং সালাত আদায় করে কিয়ামতের দিন তাদের উপরে পরিপূর্ণ নুর প্রাপ্তির সুসংবাদ আল্লাহ দান করবেন। এছাড়া ফজরের সালাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দার জীবনের সকল অভাব অনটন দূর করে দিয়ে তার রিজিক বরকত দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেন। কেননা ফজরের সালাতের মাধ্যমে বান্দার রিজিকের সকল স্তরে রহমত এবং বরকত নাযিল হয়। আল্লামা ইবনুল কাইয়ুম রহ. বলেন, সকাল বেলার ঘু্‌ম, ঘরে রিজিক আসতে বাধা দেয়। কেননা বান্দার জন্য রিজিক কে আল্লাহর তরফ থেকে তখন বন্টন করা হয়। সুতরাং আমরা বলতে পারি আমাদের জীবনে, ফজর নামাজের গুরুত্ব এবং ফজিলত অপরিসীম।

মানুষের জীবনে জোহরের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

 জোহরের নামাজ মুসলমানদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি দিনের দ্বিতীয় ওয়াক্তের নামাজ। এই নামাজ সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢোলে পড়ার পর থেকে আসর নামাজের আগ পর্যন্ত পড়া যায়। মানুষের জীবনে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করার সময়, জোহরের নামাজের ব্যাপারে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম এরশাদ করেন, "যে ব্যাক্তি যোহরের নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখেরাতের সফলতা দান করবেন"। তিনি আরো বলেন যে আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তিকে শয়তানের প্ররোচনা থেকে রক্ষা করে তার জন্য জান্নাতের দ্বার উন্মুক্ত করে দেবেন।সারাদিনে দুপুরবেলা হচ্ছে কর্মব্যস্ততা মধ্যাহ্নভোজ ও বিশ্রামের সময়। তাই বলে এই নামাজে অবহেলা করার কোন সুযোগ নেই।

 মেরাজের সময় মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর এই বাণী প্রেরণ করেন যে, মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। মেরাজ থেকে ফিরেই আমাদের প্রিয় মুহাম্মদ সর্বপ্রথম জোহরের নামাজ আদায় করেন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে জোহরের নামাজের সময় এবং গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন। এছাড়া মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম বলেছেন যে, "যে ব্যক্তি জোহরের চার রাকাত ফরজের আগে চার রাকাত সুন্নত এবং পরে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করা হবে"। (তিরমিজি)

আরো পড়ুনঃ-

মানুষের জীবনে আসরের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

 আসর নামাজ হচ্ছে আমাদের সারাদিনের তৃতীয় অংশের নামাজ। এটা জোহর এবং মাগরিবের মধ্যবর্তী সময়ের নামাজ। আসর নামাজের গুরুত্ব সম্পর্কে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "তোমাদের মাঝে ফেরেশতারা পালাবদল করে এসে থাকেন, মানে একদল দিনে এবং একদল রাতের জন্য"। তবে সেই ফেরেশতাগণ আসর এবং ফজরের সালাতের মুহূর্তেই একত্রিত হন। যখন রাত্রি যাপনকারি ফেরেশতাগণের দল উঠে যান আল্লাহ তা'আলা তাদের কাছে প্রশ্ন করেন "আমার বান্দাদের কোন অবস্থায় রেখে এলে?" যদিও তিনি সর্বময় সর্ব জ্ঞানী, তিনি সকল কিছুই জানেন। তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহ তাআলার প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে,

 হে আল্লাহ! "আমরা আপনার বান্দাদের নামাজরত অবস্থায় রেখে এসেছি। আর আমরা যখন গিয়েছি তখনও তাদের নামাজরত অবস্থায়ই পেয়েছি"। আল্লাহর বান্দাদের কাছে বান্দার জীবনে নামাজের গুরুত্ব ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করার সময় মাগরিবের নামাজের গুরুত্ব প্রসঙ্গে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন যে, "তোমাদের মধ্যে কেউ যদি সূর্যাস্তের আগে আসরের নামাজের এক সিজদা পায় তাহলে সে যেন সেই সালাত পূর্ণ করে নেয়। আর যদি সূর্যোদয়ের আগে ফজরের সালাতের এক সিজদা পায় তাহলে সে যেন ফজরের সালাত পূর্ণ করে নেয়"। সুতরাং বলা যায়, আসরের নামাজ আমাদের দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে অন্যরকম গুরুত্ব বহন করে।

মানুষের জীবনে মাগরিবের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

 মাগরিবের নামাজ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে পঞ্চম, ওয়াক্তের সালাত।এটি আসর এবং ইশা ওয়াক্তের মধ্যবর্তী সময়ের সালাত। প্রতি ওয়াক্তের নামাজ সমান গুরুত্বপূর্ণ হলেও, কোরআন ও হাদিসে মাগরিবের নামাজের আলাদা গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন, "আর তোমরা সকাল সন্ধ্যায় (ফজর ও মাগরিবের সময়) আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষনা কর" (সূরা আলে ইমরান)। কারণ এই দুটি সময়ে, প্রকৃতিতে প্রতিদিন সবচাইতে বড় দুটো পরিবর্তন ঘটে। অর্থাৎ দিন ও রাতের পালাবদল ঘটে।

 মানুষের জীবনে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করার সময়, আমাদের প্রিয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাগরিবের নামাজ সম্পর্কে বলেন যে, "যে ব্যক্তি মাগরিবের নামাজ পড়বে তার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে বিশেষ রহমত নাযিল হবে এবং সে নিরাপদে থাকবে"। তিনি আরো বলেন যে, যে ব্যক্তি মাগরিবের ফরজ তিন রাকাত নামাজের পর পরবর্তীতে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করবেন তার জন্য জান্নাতের দরজার খুলে দেওয়া হবে। এছাড়া মাগরিবের পর আল্লাহর যে সকল বান্দা গণ, অন্তরের ভয় এবং আশা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। আল্লাহ তাদের প্রতি বিশেষ রহমত বর্ষণ করেন।

মানুষের জীবনে এশার নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

 এশা হচ্ছে আমাদের দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের মধ্যে সর্বশেষ ওয়াক্তের সালাত। এই নামাজের গুরুত্ব প্রসঙ্গে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালাম বলেছেন যে, "যে ব্যাক্তি এশার নামাজ জামাতের সাথে আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত্রি জেগে নামাজ আদায় করলো"। এর গুরুত্ব প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন যে, যে ব্যক্তি জামায়াতের সাথে এশার নামাজ আদায় করেন, তার জন্য পরবর্তী দিন পর্যন্ত নিরাপত্তা প্রদান করা হয় এবং যদি কেউ নিষ্ঠা ও ঈমানের সাথে নিয়মিত এশার নামাজ আদায় করেন, আল্লাহ তা'আলা তাঁর জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন।

 একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে জামায়াতে নামাজ আদায় করা উত্তম। কেননা জামায়াতে নামাজ পড়ার মাধ্যমে একাকী নামাজ আদায় করার চেয়ে ২৭ গুণ বেশি সওয়াব পাওয়া যায়। যুদ্ধের মত কঠিন পরিস্থিতিতেও আল্লাহ তায়ালা জামায়াতের সঙ্গে নামাজ পড়ার তাগিদ দিয়েছেন। একমাত্র নামাজই  মহান আল্লাহ তায়ালা এবং তার বান্দাদের সাথে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করে। মানুষের জীবনের পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলত সমান হলেও, এক একটি ওয়াক্তের নামাজে আলাদা আলাদা গুরুত্ব, ফজিলত ও তাৎপর্য বহন করে। সুতরাং মানুষের জীবনের ইহকালীন এবং পরকালীন কল্যাণের লক্ষ্যে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার কোন বিকল্প নেই।

আরো পড়ুনঃ-

ইচ্ছাকৃতভাবে ১ ওয়াক্ত নামাজ না পড়ার শাস্তি কি

 আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআনের, বিভিন্ন জায়গায় সরাসরি ৮২ বার "সালাত" শব্দটি উল্লেখ করে আল্লাহ তা'আলা মানুষের জীবনের নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে তুলে ধরেছেন।আমাদের প্রত্যেক মুসলিম নর নারীর জীবনে নামাজ এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। যেই নামাজ আদায় করার মাধ্যমে প্রতিটি বান্দার ইহকাল এবং পরকালের কল্যাণ এবং মুক্তির পথ প্রশস্ত হয়। ঠিক তেমনি সেই নামাজ ত্যাগ করার মাধ্যমেও, বান্দার ইহকালীন এবং পরকালীন অকল্যাণ সাধিত হয়। মানুষের জীবনে নামাজ আদায় করা যেমন অত্যন্ত গুরুত্ব এবং ফজিলত পূর্ণ, ঠিক তেমনি সেই নামাজ ত্যাগকারী ব্যক্তির জন্য রয়েছে শাস্তির বিধান।আল্লাহ তায়ালা বলেন, বান্দার জীবনের সকল অবস্থাতেই নামাজ ফরজ।

  নামাজের কোন মাফ নেই। সর্বাবস্থায় প্রত্যেকটি মুসলিম নর নারীকে নামাজ আদায় করতেই হবে। আর সেই নামাজ যদি কেউ  ত্যাগ করে থাকেন সেই প্রসঙ্গে নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহিইস  সালাম বলেন, "যদি কোন ব্যক্তি সালাত ছেড়ে দেয়, আর ইতিমধ্যে ওই সালাতের ওয়াক্ত পার হয়ে যায় এবং ওই সালাত আদায় করে নেয় তবুও তাকে এক হুকবা জাহান্নামের শাস্তি দেওয়া হবে। এক হুকবা হল ৮০ বছরের সমান। যেখানে প্রত্যেক বছর হলো ৩৬০ দিনের সমান। আর সেই ৩৬০ দিনের প্রত্যেকটি দিন হবে এক হাজার বছরের সমান, যেভাবে তোমরা গণনা করো"। উল্লেখ্য যে, উক্ত হিসেব অনুযায়ী শাস্তি হবে সর্বমোট ২ কোটি ৮৮ লক্ষ বছর।

 সুতরাং মানুষের জীবনে নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত এবং নামাজ ত্যাগ করার যে ভয়াবহ শাস্তির কথা আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি সালামের উপরে উল্লেখিত এ আলোচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে, ইচ্ছাকৃতভাবে ১ ওয়াক্ত নামাজ আদায় না করার শাস্তি ঠিক কতটা ভয়াবহ। যা বর্ণনা করে শেষ করার মত নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে যেন যথাযথ হেদায়েত দান করেন এবং তার দেয়া জীবন বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তৌফিক দান করে আমাদের ইহকাল এবং পরকালের জীবনকে কল্যাণ দিয়ে পরিপূর্ণ করে দেন।

দুনিয়াতেই নামাজ পড়ার পুরস্কার কি কি পাওয়া যায়

 মানুষের জীবনে নামাজ পড়ার গুরুত্ব ফজিলত এবং পুরস্কার অপরিসীম। যা বর্ণনা করে শেষ করার মত নয়। কেননা নামাজের মাধ্যমে ঠিক যেমন পরকালে কল্যাণের পথ নিশ্চিত হয়, ঠিক তেমনি ইহকাল তথা দুনিয়াতেই এর অফুরন্ত পুরস্কার বান্দার জন্য আল্লাহ তা'আলা নিশ্চিত করে থাকেন। নামাজ আদায়কারী বান্দার জীবনকে আল্লাহ তা'আলা অফুরন্ত নিয়ামত, রহমত, বরকত দ্বারা পরিপূর্ণ করে দেন। কেননা নামাজ, বান্দাকে আল্লাহ তায়ালার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হবার পথ সুনিশ্চিত করে দেয়।ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ হচ্ছে দ্বিতীয় স্তম্ভ। চলুন জেনে নেই ঠিক কি কি নিয়ামত, রহমত এবং বরকত দ্বারা আল্লাহ তা'আলা তার নামাজ আদায়কারী বান্দার জীবনকে পরিপূর্ণ করে দেন তার সামান্য কিছু উদাহরণ-

  • একমাত্র নামাজের মাধ্যমেই দুনিয়াতে কোন বান্দা আল্লাহ তায়ালার অত্যন্ত নৈকট্য লাভের সুযোগ পেয়ে থাকেন
  • আল্লাহ তাআলা বান্দার জীবনের সমস্ত অভাব দূর করেন
  • বান্দার রিজিকের পরিপূর্ণ স্তরে রহমত এবং বরকত নাযিল করেন।
  • বান্দার জীবনের রোগব্যাধি এবং বালা মুসিবত থেকে হেফাজত করেন
  • বান্দার মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করেন
  • বান্দার জন্য নেক হায়াত বৃদ্ধি করে দেন
  • চেহারাতে উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেন
  • নামাজ আদায়কারী বান্দার দোয়া সহজেই কবুল করে নেন
  • নামাজের মাধ্যমে দুনিয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদার এবং মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্য করে দেন
  • সর্বোপরি বান্দার ইহকালীন কল্যাণের পথ সুনিশ্চিত করে পরকালীন কল্যাণের পথকে প্রশস্ত এবং নিশ্চিত করে দেন ইত্যাদি।

 তবে শুধু দুনিয়াতেই নয় নামাজ আদায়কারীর বান্দার জন্য আল্লাহ তা'আলা আখিরাতের জন্যও রেখেছেন অফুরন্ত পুরস্কার। চলুন জেনে নেই, আখিরাতের জীবনের অফুরন্ত পুরস্কার এর মধ্যে সামান্য কিছু পুরস্কারের কিছু ধারণা। যে পুরস্কার কিনা বান্দাকে অনন্ত সুখ আর প্রশান্তিময় জীবনের উপহার বয়ে এনে দেবে। যেখানে থাকবে শুধু "অনন্ত সুখ আর সুখ"।কোন চক্ষু যে সুখের কোন সৌন্দর্য কখনো দেখেনি, কোন হৃদয় যে সুখের কল্পনা কোনদিন করতে পারেনি, কোন বান্দা যে সুখ কোনদিনও অনুভব করেনি-

  • মৃত্যুর পর আল্লাহ তায়ালা প্রথমেই বান্দার কবরের আজাব মাফ করে দেবেন
  • বান্দার কবরের সাথে বেহেস্তের একটি সংযোগ করে দেবেন
  • "নামাজকেই" মুনকার নাকির ফেরেশতার প্রশ্নের উত্তর হিসেবে তৈরি করে দেবেন
  • হাশরের ময়দানে বান্দার ডান হাতে আমলনামা দেবেন
  • বিজলির ন্যায় পুলসিরাত পার করিয়ে দেবেন
  • বিনা হিসেবে ক্ষমা করে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং জান্নাতে স্বয়ং আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্যে যাবার পরম সৌভাগ্য দান সহ জান্নাতে আরো অনেক অফুরন্ত নিয়ামত দান করবেন।

নামাজ না পড়ার শাস্তি কি কি

 আল্লাহ তায়ালা যেমন নামায আদায়কারীর জন্য অফুরন্ত পুরস্কারের ব্যবস্থা করে রেখেছেন ঠিক তেমনি নামাজ ত্যাগকারী বান্দার জন্য অবর্ণনীয় দুঃখ এবং শাস্তির ঘোষণা আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআনে উল্লেখ করে দিয়েছেন। নামাজ ত্যাগকারী বান্দার জন্য আল্লাহ তা'আলা যে সকল শাস্তির বিধান রেখেছেন তার মধ্যে কিছু শাস্তি তিনি দুনিয়াতেই বান্দাকে ভোগ করান। আর কিছু শাস্তি তিনি বান্দার পরকালের জন্য অবধারিত করে রেখেছেন। সেই শাস্তি বান্দার ইহকাল এবং পরকাল দুই কালকেই ধ্বংস করে দেয়। আসুন জেনে নেই, নামাজ থেকে গাফেল হওয়ার কারণে ইহকাল এবং পরকালের ভয়াবহতার কিছু বর্ণনা-

দুনিয়ার শাস্তিঃ-

  • আল্লাহ তাআলা নামাজ ত্যাগকারীকে দুনিয়ার জীবনে সকল কাজের বরকত থেকে বঞ্চিত করেন
  • নামাজ ত্যাগকারী ব্যক্তির চেহারায় কোনো নূর বা উজ্জ্বলতা থাকে না
  • নামাজ ত্যাগকারী ব্যক্তি দুনিয়াতে অন্যান্য ভালো কাজের কোন পুরস্কারও পাবে না
  • নামাজ ত্যাগকারী ব্যাক্তির জন্য কোন লোক দোয়া করলে তা কাজে আসবে না
  • নামাজ ত্যাগকারী ব্যাক্তি আল্লাহ তায়ালার সব সৃষ্টি জীবের কাছে ঘৃণিত হয়
  • নামাজ ত্যাগকারী ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ তা'আলা ফিরিয়ে দেন
  • নামাজ ত্যাগকারী ব্যাক্তি ইসলামের শান্তি এবং প্রতিশ্রুতি থেকে বঞ্চিত হয়
  • নামাজ ত্যাগকারী ব্যক্তির ক্ষুধার্ত, পিপাসার্ত এবং অপমানিত অবস্থায় মৃত্যু নসিব হয় ইত্যাদি।

আখিরাতের শাস্তিঃ-

  • বেনামাজির কবরকে আল্লাহ তা'আলা খুব সংকীর্ণ করে দেন
  • তার কবরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের সাথে তার কবরের একটি সংযোগ করে দেওয়া হয়
  • বেনামাজির কবরে একজন ফেরেশতা লোহার হাতুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। যিনি সেই বান্দার ওপর প্রতিনিয়ত আঘাত করতে থাকেন এবং আঘাতের কারণে বান্দার দেহ প্রতিনিয়ত মাটির সাথে মিশতে থাকে। আর এই আঘাত এভাবেই চলমান থাকে।
  • বেনামাজির কবরের জন্য এমন একটি সাপ নিযুক্ত করা হয়, যে সাপের চোখগুলো হবে আগুনের, নখগুলো হবে লোহার এবং ওই সাপের আওয়াজ হবে বজ্রের মত বিকট
  • বেনামাজীর হিসাব খুব কঠিন ভাবে নেওয়া হয়
  • হাশরের মাঠে বেনামাজির আমলনামা তার ডান হাতে দেওয়া হবে না
  • বেনামাজির উপর আল্লাহ তায়ালা সর্বদাই অসন্তুষ্ট থাকেন এবং সর্বশেষ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন।

আরো পড়ুনঃ-

নামাজ ভঙ্গের কারণ কি কি

 উপসংহারঃ- যেহেতু নামাজ আমাদের ইহকালীন এবং পরকালীন কল্যাণের পথ নিশ্চিত করার সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম তাই আমাদের প্রত্যেককেই নামাজকে আল্লাহর প্রতি অত্যন্ত ভয় রেখে, একনিষ্ঠ মনোযোগ নিয়ে শুদ্ধ নিয়মে পড়া উচিত। তবে কিছু নির্দিষ্ট কারণে আমাদের নামাজ বাতিল বা ভঙ্গ হয়ে যায়। যেমন-নামাজে অশুদ্ধ তেলাওয়াত করলে, নামাজের ভিতর কথা বললে, কোন লোককে সালাম দিলে, সালামের উত্তর নিলে, বিনা কারণে উহ! আহ! ইত্যাদি শব্দ করলে, বিনা কারণে কাশি দিলে এবং আমলে কাছির করলে।

 তাই আসুন, আমরা সকলেই নামাজের ব্যাপারে সচেষ্ট হই। আল্লাহর দরবারে মন প্রাণ উজাড় করে ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে আমাদের ইহকাল এবং পরকালের কল্যাণ এবং মুক্তির পথ প্রশস্ত করতে চেষ্টা করি। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় এবং সকল প্রকার পাপের পথ থেকে নিজেকে বিরত রেখে আল্লাহর দরবারে একজন ঈমানদার ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে কবুল করানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি। কেননা আমাদের জীবনে নামাজের গুরুত্ব এবং ফজিলত অপরিসীম আর একমাত্র "নামাজই হলো মুমিন আর মুনাফিকের মধ্যে পার্থক্য নিশ্চিতকারী এবং বেহেস্তের চাবিকাঠি"।

 








 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অনুভবের কথার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url