সকালে খালি পেটে কি খেলে ওজন বাড়ে

 আমরা সকলেই জানি যে,যদি শরীর সুস্থ থাকে তাহলে পৃথিবীর সবকিছুই ভালো লাগে।আর অসুস্থ থাকলে পৃথিবীর সব কিছুই যেন মূল্যহীন হয়ে যায়।প্রত্যেকটি মানুষের ক্ষেত্রেই পৃথিবীতে খুব সুন্দর ভাবে বেঁচে থাকার জন্য শরীর ভাল থাকা খুব জরুরী ।একজন অসুস্থ ব্যক্তিই শুধু অনুভব করেন,বেঁচে থাকার জন্য সুস্বাস্থ্য কত বড় সম্পদ।সকলের ক্ষেত্রেই নিজেদের সৌন্দর্য বজায় রাখার জন্য,একটু মোটা হওয়া বা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হওয়া খুবই জরুরী।আসুন জেনে নেই,কি খাবার খেলে বা কিভাবে চললে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারব। 

পোস্ট সূচীপত্রঃ-


সহজলভ্য পুষ্টিকর খাবারের কিছু বর্ণনা

 আমাদের জীবনধারণের জন্য খাবার অপরিহার্য একটি বিষয় বা বস্তু।যেটা ছাড়া পৃথিবীতে কোন প্রাণীরই বেঁচে থাকা বা টিকে থাকা অসম্ভব। তবে আমাদের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সকল ধরনের খাবারেরই কিন্তু প্রয়োজনীয়তা বা গুণগত মান এক নয়। আমাদেরকে জানতে হবে কোন খাবার খেলে আমরা সুস্থভাবে চলতে পারবো বা বাঁচতে পারব আর কোন ধরনের খাবার খেলে আমাদের শরীর অসুস্থ হবার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের আরো জানতে হবে, কোন কোন খাবারের পুষ্টিগুণ কেমন। তাই আর কথা না বাড়িয়ে চলুন জেনে নেয়া যাক,পুষ্টিকর খাবারের কিছু বর্ণনা যা আমরা সহজেই হাতের নাগালে পেতে পারি।

 প্রথমে যদি আমরা কোন ফলের কথা চিন্তা করতে যাই, যেটা আমরা হাতের নাগালে সবসময়ই পেয়ে থাকি সেটা বলা যায় "কলা"। কলা এমন একটি ফল বা খাবার যার মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন,ক্যালসিয়াম এবং বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন।এটা আমাদের শরীরে শক্তি সঞ্চয় করতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এছাড়া কলার মাঝে থাকা আয়রন আমাদের শরীরে হিমোগ্লোবিন তথা রক্ত বৃদ্ধিতে খুবই কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কলা কে সার্বজনীন সাধ্যের মধ্যে একটি ফল বলা যায়। তাই এর দাম সাশ্রয়ী হওয়ায় এবং এর গুণগত মান অনেক বেশি হওয়ায় এটা আমাদের শহর তথা গ্রামের সকল মানুষের সুস্বাস্থ্য গঠনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 আরো বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী ফল যেমন পেয়ারা ,পাকা পেঁপে,আম,জাম,কাঁঠাল,লিচু,ডাব এবং আমাদের জানা পরিচিত আরো অনেক ফল আছে,যা কিনা আমাদের সুস্বাস্থ্য গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আবার যদি একটু টক জাতীয় ফলের কথা বলতে যাই,সে ক্ষেত্রে বলা যায় লেবু,বাতাবি লেবু,কমলা,মাল্টা,আমড়া যেগুলো আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর ঘাটতি পূরণে পর্যাপ্ত ভূমিকা পালন করে।যে ফলগুলো আমাদের দেশে সাধারণত পাওয়া যায় না,সেই ফলগুলোর মাঝেও কমবেশি অনেক পুষ্টিগুণাগুণ বিদ্যমান থাকে।তবে সেটা বাইরের দেশ থেকে আমাদের হাতের কাছে এসে পৌঁছাতে যেহেতু বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়াজাত হয়ে আসে সেক্ষেত্রে তার পুষ্টি গুণাগুণ সঠিকভাবে বজায় থাকার বিষয়ে আমরা সহজেই সন্দেহ পোষণ করতে পারি।

 এছাড়া কিছু কিছু ফলের মাঝে এমন কিছু রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়,ফলগুলোকে ভালো রাখতে বা পচনের হাত থেকে রোধ করতে যার কারণে সেটা আমাদের শরীরের পুষ্টির চেয়ে ধীরগতির বিষক্রিয়া হিসেবেই কাজ বেশি করে। তাই আমরা যদি আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে বলতে চাই,তাহলে সে ক্ষেত্রে যতটা বেশি সম্ভব আমাদের দেশীয় ফলের ওপরে আমাদের গুরুত্ব একটু বেশি দিতে হবে, বাইরের দেশ থেকে আসা বিভিন্ন ফলগুলোর চেয়ে।কেননা আমাদের দেশীয় ফল গুলো যেমন সাশ্রয়ী,ঠিক তেমনি পুষ্টি গুনাগুন গুলো অনেক বেশি অক্ষুন্ন থাকে বাইরের দেশের ফলের চেয়ে।এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বাদাম যেমন- কাঠবাদাম,কাজুবাদাম,পেস্তাবাদাম,কিশমিশ ইত্যাদি খাবার গুলো ওজন বৃদ্ধিতে অনেকটাই সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

 এছাড়া হাতের নাগালেই থাকা অত্যন্ত পুষ্টিমানের খাবার হচ্ছে ডিম।যাতে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ফ্যাট থাকে। যা আমাদের বেড়ে ওঠা এবং শক্তি সঞ্চয় করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট কার্যকরী ভূমিকা রাখে। "দুধ" কেউ সাধ্যের মধ্যে অধিক পুষ্টি গুনাগুন সম্পন্ন একটি খাবার বলে বিবেচনা করা যায়।তবে দুধে অনেকের যেহেতু অ্যালার্জি থাকে সেক্ষেত্রে এটি কারো কারো ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাজ করতে পারে।এছাড়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য তালিকায় আছে ভাত,রুটি এবং কিছু সবজি।যা কিনা সবার জন্যই সহজলভ্য এবং অধিক পুষ্টি গুনাগুন সম্পন্ন। সবজির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু যেমন-লাউ,মিষ্টি কুমড়া,গাজর,শসা,কাঁচা পেঁপে,আলু,বেগুন,শিম,বরবটি,লতা,করলা,টমেটো, ফুলকপি,বাঁধাকপি ইত্যাদি।

 এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ডাল,মটরশুটি এবং বিভিন্ন ধরনের শাক যেমন- লাল শাক,কচু শাক,পুঁই শাক, লাউ শাক,পালং শাক এগুলোতে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি গুনাগুন সমৃদ্ধ(যেমন- ভিটামিন, খনিজ, মিনারেল) থাকে যা কিনা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য ভূমিকা রাখে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মাছ,বিশেষ করে ছোট মাছ এবং প্রাণীজ আমিষ আমাদের মোটা হবার ক্ষেত্রে বা সুস্বাস্থ্যবান হবার ক্ষেত্রে যথার্থ ভূমিকা পালন করে। আর পানি তো বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। যাকে জীবনের অপর নাম বলে আখ্যায়িত করা হয়।যেহেতু প্রাণীজ আমিষ গুলো একটু বেশি ব্যয়বহুল বা তাই আমরা আমাদের সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব এই খাবারগুলো চিন্তা ভাবনা করে পুষ্টি চাহিদাগুলো পূরণ করতে পারি।

শিশুর পুষ্টিকর খাবারের তালিকা

 শিশুরাই হচ্ছে আমাদের আগামীর ভবিষ্যৎ বা আমাদের বংশপরম্পরা রক্ষার ধারক এবং বাহক। আমাদের বড়দের যেমন বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টি গুণাগুণ সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন ঠিক তেমনি শিশুদের ক্ষেত্রেও বড় হওয়া,তাদের মানসিক বিকাশ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি এবং বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টিকর খাবারের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। তবে সেই খাবারগুলো শিশুদের এক এক বয়সের ক্ষেত্রে একেক রকম হয়ে থাকে। যেমন জন্মের পর থেকে শুরু করে প্রথম ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য একমাত্র এবং অপরিহার্য খাবার হচ্ছে মায়ের বুকের দুধ। শিশুর সেই বয়সে"মায়ের বুকের দুধের বিকল্প অথবা সমকক্ষ অথবা শ্রেষ্ঠ"বলে পৃথিবীতে আর কোন খাবারই নেই। যা কিনা একজন শিশুকে সুস্থ্য  স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে বা বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে সবচাইতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

শিশুর ছয় মাস বয়সের পর থেকে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি শুরু করতে হয় পারিবারিক খাবার। পারিবারিক খাবার বলতে সেই ধরনের খাবারকে বোঝানো হয়- যা কিনা আমরা পরিবারের অন্যান্য বড় সদস্য যারা আছি তারা যে ধরনের খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করি অথবা বেঁচে থাকি ঠিক সেই খাবার কেই। যেমন ডাল,ভাত,মাছ,মাংস,শাক,সবজি,কলিজা,ডিম ইত্যাদি। যা কিনা শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশ এবং সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অপরিহার্য।এছাড়া দুধ অনেক পুষ্টি গুনাগুন সম্পন্ন হলেও যেহেতু অনেকের ক্ষেত্রে কিছুটা এলার্জি বা অন্যান্য ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণ হিসেবে কাজ করে।তাই ছয় বছর বয়সের নিচের শিশুকে গরুর দুধ বা অন্য কোন প্রাণীর দুধ বা কৌটা জাত দুধ না দেয়াই উত্তম।

 এছাড়া মায়েদেরকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে,একজন ছেলে শিশুর ক্ষেত্রে দুই বছর এবং মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আড়াই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ পান করাতে হবে। যা কিনা তাদের প্রত্যেকের সন্তানকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় শক্তিশালী হয়ে একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার জন্য যথার্থ ভূমিকা রাখবে। তবে মনে রাখতে হবে,অবশ্যই শিশুর ছয় মাস বয়সের পর থেকে তাকে বুকের দুধের পাশাপাশি পারিবারিক খাবারের অভ্যস্ত করে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা হুমকির মুখে পড়বে।যা কিনা আমাদের আগামী প্রজন্মকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে।তাই আমাদের সকলকেই এই বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি।

স্বাস্থ্যবান হবার জন্য দৈনিক কতবার খাব

 আমরা বাঙালি, শুধু বাঙালি নই,আমরা"মাছে ভাতে বাঙালি"। এটাই যেন আমাদের পরিচয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে আমরা সাধারণত সারা দিনে তিন বেলা খাবার খেয়ে জীবন যাপন করি। তবে বিভিন্ন দেশে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য দৈনন্দিন জীবনের খাদ্যাভ্যাস বিভিন্ন রকম। কেননা এই খাদ্যাভ্যাস স্থান,কাল এবং জাতি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। আমরা বাঙালিরা যেন,জন্মের পর থেকেই পূর্বপুরুষ বা পূর্ব প্রজন্মের দেখানো এবং শেখানো নিয়ম অনুযায়ী তিন বেলা খাবার খেয়ে জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে গড়ে উঠেছি।

 এই তিন বেলা খাবার আমাদের ক্ষুধা নিবারণ করে ঠিকই তবে,আমাদের শরীরের সঠিক চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি গুনাগুন এবং শক্তি সমৃদ্ধশালী করার জন্য,তিন বেলা খাবারের পাশাপাশি মাঝেমাঝে আরো দুই থেকে তিনবার হালকা কিছু খাবারের অভ্যাসে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে। যা কিনা আমাদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এখন হয়তো আপনাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে,নিয়মিত এই তিন বেলা খাবারের বাইরে বাকি আরো দুই থেকে তিন বেলা আমরা কোন ধরনের খাবার বা কি খাবার খেতে পারি? আসুন তবে সেই বিষয়ে সামান্য কিছু তথ্য আমরা জেনে নেই।

 আমরা যেহেতু স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী তিন বেলা ভাত,ডাল,মাছ,মাংস,দুধ,ডিম এই ধরনের খাবার খেয়ে অভ্যস্ত বা সাধারণত এই ধরনের খাবার খেয়েই আমরা জীবন যাপন করি। তাই আরো অতিরিক্ত দুই থেকে তিন বেলা খাবারের তালিকায় আমরা বিভিন্ন ধরনের হালকা খাবার যা আমরা নিজেরা বাসায় তৈরি করতে পারি অথবা কিনে খেতে পারি। যেমন কিছু বিস্কিট,কিছু মিষ্টান্ন খাবার,বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিগুণ সম্পন্ন কিছু দেশীয় ফল ইত্যাদি। এক্ষেত্রে বিদেশি ফলমূলের তালিকা ও যোগ করা যেতে পারে।তবে অবশ্যই বিদেশি ফল বা খাবার গ্রহণ করার ব্যাপারে আমাদের সকলকেই সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।

 এই তিন বেলার অতিরিক্ত খাদ্যাভ্যাস আমাদের সুস্থ শরীর সুস্থ মানসিকতা এবং সুস্থ জাতি গঠনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে অবশ্যই খাবারে অতিরিক্ত ভাজি পোড়া এবং মসলা জাতীয় বা চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করা বাঞ্চনীয়। কেননা এই ধরনের খাবার আমাদের শরীরে উপকারের চেয়ে ক্ষতির কারণ বেশি হয়ে দাঁড়ায়। যা আমাদের কাঙ্খিত স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার পথে সবচাইতে বড় অন্তরায়। তবে প্রয়োজন অনুযায়ী সব ধরনের খাবার আমাদেরকে গ্রহণ করতে হবে। যা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সহায়তা করবে।

আরো পড়ুনঃ-

মোটা হওয়া মানেই কি স্বাস্থ্যবান আর সুন্দর হওয়া

 আমাদের সমাজে,দেশে বা পৃথিবীতে অনেক ধরনের অনেক জাতির লোক বসবাস করে। যাদের শারীরিক গঠন,চেহারা মানসিক চিন্তা-চেতনাও জাতিভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন কেউবা খাটো,কেউ বা লম্বা,কেউবা মোটা,কেউবা চিকন ইত্যাদি। তবে খাটো-লম্বা,চিকন বা মোটা এগুলোর কোনটাই সুস্থতা বা সুস্বাস্থ্যবান হবার ক্ষেত্রে একমাত্র ভাব নির্দেশক নয়। তবে বয়সের সাথে সাথে একটা সুনির্দিষ্ট ওজন,কেউ সুস্থ বা স্বাভাবিক কিনা সেটা নির্ণয় করতে দিক নির্দেশনা প্রদান করে। এক্ষেত্রে উচ্চতার সাথেও ওজন কিছুটা সম্পর্কিত থাকে। তাই একদম সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হওয়ার ক্ষেত্রে বয়সের সাথে সাথে নির্দিষ্ট পরিমাণে ওজন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 তবে আমাদের সমাজে বা দেশের অনেক মানুষই মনে করে থাকেন যে,মোটা হওয়া মানেই বুঝি সুন্দর হওয়া,সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাওয়া অথবা সুস্বাস্থ্যবান হওয়া। আসলে এই ধারণাটি একেবারেই সঠিক নয়। যদি কারো ওজন,তার বয়স এবং উচ্চতার তুলনায় স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে সেটা যেমন খারাপ লক্ষণ ঠিক তেমনি বয়স এবং উচ্চতার তুলনায়  কারো ওজন অনেক বেশী হওয়াটাও খারাপ লক্ষণ। কম ওজনের ব্যক্তিরা যেমন পুষ্টিহীনতা সম্পর্কিত কিছু রোগে ভুগে থাকেন,ঠিক তেমনি অতিরিক্ত ওজনের ব্যক্তিরাও বিভিন্ন ধরনের জটিল বা প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। যেমন -ডায়াবেটিস,হৃদরোগ ইত্যাদি।

 এছাড়া বয়স এবং উচ্চতার তুলনায় কম ওজন এবং বেশি ওজন মানুষের দৃশ্যমান স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে নষ্ট করে দেয়। যার কারণে অনেকেই সমাজে অনেক ধরনের কটুক্তি বা জটিলতার শিকার হন। তাই সুস্থ স্বাভাবিকভাবে একটি সুন্দর জীবন যাপনের ক্ষেত্রে সঠিক ওজনের গুরুত্ব অনেক বেশি। সুতরাং আমরা এক কথায় আমাদের এই ভুল ধারণা থেকে বের হয়ে আসতে পারি যে,শুধু মোটা হওয়া মানেই স্বাস্থ্যবান বা সুন্দর হওয়া নয়। মানুষের সৌন্দর্য এবং সুস্বাস্থ্য,বয়স এবং উচ্চতার সাথে সাথে সুনির্দিষ্ট ওজনের ওপরেই নির্ভরশীল। সেটা কম বা বেশি হওয়া নয়। তাই আসুন,আমরা আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সচেষ্ট হই।

কেন বাঁচার জন্য পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা

 মানুষের বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে,সুস্থ মস্তিষ্ক এবং সুস্থ শরীর গঠনের জন্য পুষ্টি অপরিহার্য একটি বিষয়। যেটা ছাড়া মানুষের সুস্বাস্থ্য কল্পনাও করা অসম্ভব। আমরা অনেকেই "পুষ্টি" বলতে শুধুমাত্র ভিটামিন শব্দ বা কথাটিকেই বুঝি। আসলে মানুষের শরীর কিন্তু শুধুমাত্র ভিটামিনের উপর নির্ভরশীল নয়। মানে শুধুমাত্র ভিটামিন মানুষের শরীরকে সুস্থ,সুন্দর এবং স্বাভাবিকভাবে গঠনের ক্ষেত্রে এককভাবে ভূমিকা রাখতে পারেনা। এজন্য প্রয়োজন বিভিন্ন ধরনের খনিজ,মিনারেল,আয়রন,কার্বোহাইড্রেট,শর্করা,আমিষ ইত্যাদি গুণগত মান সম্পন্ন খাবার।

 ভিটামিন বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-ভিটামিন- এ, ভিটামিন- বি, ভিটামিন- সি, ভিটামিন- ডি, ভিটামিন- ই, ভিটামিন- কে ইত্যাদি। যা কিনা বিভিন্ন খাবারে বিভিন্ন পরিমাণে যুক্ত থাকে।তবে ভিটামিন- বি কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। একটি কে ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন এবং অপরটিকে ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন বলে। অর্থাৎ একটি চর্বির সাথে দ্রবীভূত হয় এবং অপরটি পানির সাথে দ্রবীভূত হয়। আমরা যে বিভিন্ন ধরনের শাক খেয়ে থাকি এই শাক গুলো হচ্ছে ওয়াটার সলিউবল ভিটামিনের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। 

 অর্থাৎ এগুলো খুব সহজেই পানির সাথে দ্রবীভূত হয়। তাই খেয়াল রাখা আবশ্যক যে শাক পরিষ্কার করার ক্ষেত্রে অবশ্যই কাটার আগে ধুয়ে নিতে হবে। কাটার পরে পানিতে পরিষ্কার করলে এর অধিকাংশ পুষ্টি গুনাগুন পানির সাথে দ্রবীভূত হয়ে বের হয়ে যাবে। যা কিনা আমাদের শাকের যথাযথ পুষ্টি গুনাগুন থেকে বঞ্চিত করে। তাই অবশ্যই শাক পরিষ্কার করার ব্যাপারে সকলকে সচেতন হওয়া উচিত। তবে উল্লেখ্য যে, যেকোনো ধরনের খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে সেটা যথাযথ ভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে।তারপর সেই খাবার গ্রহণ করতে হবে।

 যারা পুষ্টিহীনতা রোগে ভোগেন তারা অন্য সকল স্বাভাবিক মানুষের মতো একটি সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করতে পারেন না।যা তাদের জীবনকে অসহনীয় করে তোলে। তারা নিজ পরিবার এবং সমাজের কাছে বিভিন্ন ধরনের কটাক্ষের শিকার হয়ে থাকেন। এমনকি নিজেদের দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্মে সফলতা অর্জন করতে নানাভাবে ব্যর্থ হন। সুতরাং বলা যায়,একটি সুস্থ- সুন্দর জীবনের প্রত্যাশায় স্বাভাবিকভাবে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়ে বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।

কম খরচে পুষ্টিকর খাবার

 আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যয় এমন হয়ে উঠেছে যে কম খরচের মধ্যে বা কম দামের মধ্যে কোন কিছু পাওয়া যেন বরাবরই দুঃসাধ্য একটি ব্যাপার। তবু আমাদের জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলোর মধ্যে খাবার হচ্ছে প্রথম এবং অন্যতম। যে খাবার ছাড়া পৃথিবীতে কোন প্রাণীরই বেঁচে থাকা অসম্ভব। তবে বর্তমানে সেই খাদ্যদ্রব্যের মূল্য ও যেন আকাশ ছোঁয়া।যা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তবুও খেতে তো হবেই,যেহেতু বাঁচতে হবে।

 দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই যুগে আসুন জেনে নেই,কিভাবে আমরা কম খরচে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের পুষ্টির চাহিদা কিছুটা হলেও মেটাতে পারবো অথবা কম খরচে কিছু পুষ্টিকর খাবার আমাদের পরিবারের জন্য যোগান দিতে পারব। এজন্য আমাদের সকলকেই একটু বুদ্ধিমত্তার সাথে সিদ্ধান্ত নিতে হবে খাবার বাছাই করার ক্ষেত্রে। খাবারের পুষ্টিগুণাগুণ সম্পর্কে আমাদের সকলকেই কিছুটা ধারণা অর্জন করতে হবে। যেন আমরা আমাদের সাধ্য অনুযায়ী পুষ্টিকর খাবার সহজেই বাছাই করতে পারি।

 এজন্য আমরা প্রতিদিন মাছ এবং মাংস খাওয়ার পরিবর্তে হাতের নাগালের মধ্যে যে সবজিগুলো আমরা সাধারণত পেয়ে থাকি সেগুলোর দিকে একটু মনোনিবেশ বেশি করতে পারি। চালের সাথে ডাল এবং বেশ কিছু ধরনের সবজি মিশিয়ে রান্না করতে পারি। যাকে আমরা সাধারণত "সবজি খিচুড়ি" নামে চিনি। এছাড়া আমরা বেশ কিছু ধরনের সবজি একসাথে করে রান্না করতে পারি, যেখান থেকে আমরা একই সাথে অনেক ধরনের পুষ্টি গুনাগুন পেতে পারি। আমরা বড় মাছের পরিবর্তে ছোট মাছ কেনার আগ্রহ বেশি রাখতে পারি। এতে আমাদের মাছের যে পুষ্টি গুনাগুন সেটা যথাযথভাবে পেতে পারি। উল্লেখ্য যে বড় মাছের তুলনায় ছোট মাছের পুষ্টি গুনাগুন অনেকাংশে বেশি থাকে।

 আবার আমরা যারা গরুর মাংস,খাসির মাংস ইত্যাদি প্রাণীজ আমিষে বেশি অভ্যস্ত, তারা অভ্যাসটাকে একটু পরিবর্তন করে হাস,মুরগি,কবুতর এই মাংসগুলোর দিকে আগ্রহ বাড়াতে পারি।তাছাড়া আমরা অনেকেই জানি যে,বিভিন্ন ধরনের ডাল,বিশেষ করে মসুর ডাল প্রাণীজ আমিষের অনেকটাই বিকল্প হিসেবে কাজ করে।যা আমাদের আমিষের চাহিদা পূরণে অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। এছাড়া বিদেশি ফলমূলের প্রতি আসক্তি কমিয়ে আমরা যদি আমাদের দেশীয় ফল অর্থাৎ বিভিন্ন মৌসুমের বিভিন্ন ফল খাবার অভ্যাস তৈরি করি,তাহলে আমাদের ফলের যে পুষ্টি গুনাগুন সেটা খুব সহজেই আমরা গ্রহণ করতে পারবো।

 সুতরাং সহজেই আমরা বলতে পারি যে,আমরা যদি আমাদের চিন্তাধারা একটু পরিবর্তন করি অথবা কোন খাবারে কোন ধরনের পুষ্টি গুনাগুন অবস্থিত,আমরা যদি সেই সম্পর্কে ধারণা রেখে আমাদের খাদ্যাভাসে একটু পরিবর্তন আনি, তাহলে আমরা আমাদের কাঙ্খিত পুষ্টি চাহিদা সাধ্য অনুযায়ী পূরণ করতে সক্ষম হব। যা আমাদের সুস্থ শরীর সুস্থ মস্তিষ্ক এমনকি সুন্দর জীবন গঠনে সহায়ক হবে। আমাদের দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সম্ভাবনার পথ তৈরি করবে।

আরো পড়ুনঃ-

 খাবারে অনীহা কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

 হ্যাঁ,অবশ্যই খাবারে অনীহা স্বাস্থ্যের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে খুব একটা সচেতন নন। যারা কেউ সারাদিনে একবার,কেউবা দুবার কেউবা অসংখ্য বার খেয়ে থাকেন। পুরোটাই স্বাভাবিকভাবে খাবার গ্রহণের সঠিক নিয়ম নয়। আমাদের শরীর এবং মস্তিষ্কের স্বাভাবিক এবং সুস্থ গঠন বা বিকাশের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে সঠিক গুণগত মানের খাবার গ্রহণ ভীষণ জরুরি। কেননা কেবলমাত্র এই খাবার গ্রহণের মাধ্যমে আমরা শরীরে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি এবং শক্তি পেয়ে থাকে।

 যা কিনা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করতে এবং সুস্থতার সাথে বেঁচে থাকতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্মের মধ্য দিয়ে বা বিভিন্ন ধরনের পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে,সেটা হতে পারে শারীরিক পরিশ্রম বা মানসিক পরিশ্রম। প্রতিনিয়ত আমাদের শক্তি ব্যয় হতে থাকে। কিন্তু অন্যদিকে,আমাদের শরীরের শক্তি তৈরি বা সঞ্চয় হবার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে খাবার গ্রহণ। আর সেই খাবার যদি আমরা সঠিক সময়ে সঠিক নিয়মে গ্রহণ না করে থাকি তাহলে আমাদের শরীরের শক্তি তথা প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হতে থাকে।

 যার কারণে কোন এক সময়ে যেয়ে আমরা বড় কোন ধরনের রোগ বা জটিলতায় আটকে যাই। যা কিনা আমাদের স্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়। আমরা যদি দৈনিক পাঁচ থেকে ছয় বার পরিমানে অল্প অল্প করে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি গুনাগুন সম্পন্ন খাবার গ্রহণে অভ্যস্ত হয়ে উঠি,তাহলে আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চয়তার বিষয়টি অনেকাংশে বেড়ে যায়। যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিনিয়ত কাজকে আরো সহজ করে তুলবে এবং জীবনকে সুস্থভাবে সুন্দরভাবে দীর্ঘায়িত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

সাধ্যমত পুষ্টি চাহিদা সহজেই পূরণে করণীয়

 সেই পূর্বপুরুষ থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমাদের বাঙালি সংস্কৃতিতে এক ধরনের ধ্যান ধারণা কাজ করে যে, আমাদের পরিবারের যিনি অভিভাবক শুধুমাত্র তিনি একাই কাজ করবেন এবং বাকি সকল সদস্যরা বসে বসে খাবেন। আমাদের নিত্যদিনের জীবনযাত্রায় এই ধারণাটি আমাদেরকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই মুখ্য বাধা হিসেবে কাজ করে। কেননা আমরা যদি বাইরের দেশের কোন বাইরের জাতির দিকে তাকাই, তাহলে বুঝতে পারবো যে তারা প্রত্যেকেই প্রত্যেকের জায়গা থেকে অত্যন্ত পরিশ্রমী হয়ে থাকেন।

 আমরা সকলেই জানি যে, "যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি তত বেশি উন্নত"। কিন্তু আমাদের দেশে যেহেতু শুধুমাত্র আমাদের অভিভাবকগণই  কাজ করেন এবং পরিবারের বাকি সদস্যরা শুধুমাত্র তার পরিশ্রমের উপরে নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপন করেন,সেহেতু একজনের পক্ষে পুরো পরিবারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব বহন করা বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।যা অধিকাংশ পরিবারে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবার বিষয়ে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার করে। তাই এই বিষয়ে আমাদের সকলকে আরো সচেতন হতে হবে।যেন আমরা প্রত্যেকেই পরিবারের কিছু দায়-দায়িত্ব সাধ্য অনুযায়ী বহন করতে পারি।

 আমাদের জীবন যাপনের ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনের সকল প্রয়োজনের বা সকল চাহিদার মধ্যে সর্ব প্রথম এবং প্রধান চাহিদা হচ্ছে খাবার। আর সেই খাবার সংগ্রহের বিষয়ে আমরা যদি একটু সচেতন হই তাহলে আমরা নিজেরা আমাদের যথাযথ পুষ্টি চাহিদা পূরণ করার জন্য ভূমিকা রাখতে পারি। কিভাবে আমরা সেই ভূমিকা রাখতে পারি চলুন সেই বিষয়ে সামান্য কিছু তথ্য জেনে নেয়া যাক। আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ আমরা গ্রামে বসবাস করি।

 আমরা যদি আমাদের নিজেদের বাড়িতেই সুবিধামতো কিছু সবজি বা তরকারি চাষ করি অথবা পুকুরে কিছু মাছ চাষ করি অথবা বাড়িতে হাঁস,মুরগি,কবুতর এবং অন্যান্য গবাদি পশু যেমন গরু,ছাগল,মহিষ,ভেড়া ইত্যাদির ছোটখাটো কোন খামার করতে পারি সে ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের খাবারে যে ধরনের পুষ্টি গুণাগুণ প্রয়োজন অনুযায়ী নিজেরাই সরবরাহ করতে পারি। আর যারা শহরে বসবাস করেন তারা ও তাদের সুবিধা মত এগুলো করতে পারেন। তবে গ্রাম হোক অথবা শহর যেটাই হোক না কেন যাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন সুযোগ নেই তারা কি করতে পারেন?

 চলুন জেনে নেই সেই প্রসঙ্গে কিছু কথা। সেক্ষেত্রে আমরা আমাদের নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী কোন কর্মের সন্ধানে বের হতে পারি।যেন আমরা স্বল্প পরিসরে হলেও কিছুটা উপার্জন করতে পারি। কেননা অর্থনৈতিক সচ্ছলতা জীবন চলার পথকে অনেকাংশেই সহজ করে তোলে। যেহেতু কোন পরিবার, সমাজ তথা দেশের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণে এবং একটি স্বাস্থ্যবান সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবে নিজেদেরকে গঠনে অর্থ বা টাকা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে,সেহেতু আমাদের সকলকেই শুধু আমাদের জীবনের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করতে নয় বরং দৈনন্দিন জীবনের সকল চাহিদা পূরণ এবং নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে কর্মমুখী হতে হবে।

স্বাস্থ্যবান হতে হলে আমাদের প্রত্যেকের করণীয়

 সুস্থতা আমাদের সকলেরই কাম্য। তাই আমরা যদি প্রত্যেকেই সুস্থ থাকতে চাই, তাহলে আমাদের নিজেদেরকেও কিছু সতর্কতা এবং কিছু সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ আমরা সকলেই জানি, শৃঙ্খলা হীন এবং অনিয়ন্ত্রিত জীবন আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার ক্ষেত্রে অনেক বেশি ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করে। আমরা সকলেই একথা জানি যে,একজন সুস্থ এবং মেধাবী ব্যক্তি, একটি পরিবার, সমাজ তথা একটি দেশের সম্পদ। যে কিনা পরিবার,সমাজ,দেশ এবং জাতিকে সমৃদ্ধ রূপে গড়ে তুলতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 তাই আমরা যদি সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে চাই, আমাদের একটি শৃঙ্খলা বদ্ধ এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যা কিনা আমাদের বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং সুস্থতা নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে অনেক বেশি সহায়ক এবং কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।এজন্য আমাদের প্রত্যেককেই সচেষ্ট হতে হবে।স্বাস্থ্য সচেতনতা তথা স্বাস্থ্য সুরক্ষায়,যে অভ্যাসে আমরা নিজেদেরকে পরিবর্তন করতে পারি,চলুন জেনে নেই সেই সম্পর্কে কিছু তথ্য-

  • নিয়মিত সুষম খাদ্য তথা পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা
  • অতিরিক্ত তেল এবংচর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করা
  • দৈনন্দিন জীবনের খাদ্য তালিকায় মিষ্টি তথা চিনি জাতীয় খাবার কম খাওয়া বা পরিহার করা
  • ধূমপান,মদ্যপান,তামাক এবং বিভিন্ন নেশাজাতীয় দ্রব্য থেকে নিজেকে বিরত রাখা
  • নিয়মিত শরীর চর্চা করা
  • প্রত্যেককেই স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কিছু প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করা
  • যথাযথ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা
  • দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক কাজকর্ম স্বাভাবিকভাবে করা
  • প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে ঘুমানো
  • নিয়ম করে স্বাস্থ্যের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা চেকআপ করানো এবং
  • মানসিক চাপ যথাসম্ভব কম রাখতে চেষ্টা করা ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ- 

সুস্বাস্থ্যই হোক আমাদের বেঁচে থাকার অঙ্গীকার

 উপসংহারঃআমরা সকলেই জানি এবং বিশ্বাস করি যে,সুস্থতা দান করার একমাত্র মালিক আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তবুও আমরা আমাদের নিজেদের সচেতনতা এবং ইচ্ছে শক্তির মাধ্যমে নিজেদেরকে সুস্থ রাখতে অনেকটাই চেষ্টা করতে পারি। যে সচেতনতা এবং ইচ্ছে শক্তি কিনা,আমাদের সুস্থ থাকার বিষয়ে অনেক বেশি সহায়ক ভূমিকা হিসেবে পালন করে। তাই আমাদের সকলকেই সুস্থতার লক্ষ্যে অথবা নিজেদেরকে অনেক দীর্ঘজীবী এবং কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার আশায় আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সকল কিছুতে বিশেষ করে আমাদের খাদ্যাভাসে যথেষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা গড়ে তুলতে হবে।

 যেন আমরা পৃথিবীর বুকে নিজেদেরকে একজন সুস্থ মস্তিষ্ক এবং সুস্থ শরীরে একজন স্বাস্থ্যবান মানুষ হিসেবে তথা জাতি হিসেবে প্রদর্শন করতে পারি এবং নিজেরা সুস্থ্য সুন্দরভাবে নিজেদের জীবন অতিবাহিত করতে পারি। তবে অবশ্যই আমাদের মনে রাখতে হবে যে,স্বাস্থ্যই পৃথিবীতে সকল সুখের মূল আর শুধু মোটা হওয়া মানেই সুস্থ অথবা স্বাস্থ্যবান হওয়া নয়। সুস্থ থাকার জন্য আমাদের সকলকেই বয়স এবং উচ্চতা অনুযায়ী স্বাভাবিক ওজন ধরে রাখতে চেষ্টা করতে হবে। তাই এক কথায় বলা যায়,সুস্থ থাকা আর পৃথিবীতে আমাদের অস্তিত্ব সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে পুষ্টিকর খাবারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অনুভবের কথার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url
< /body>