শিশুদের জন্ডিস নিয়ে কিছু তথ্য
আমাদের দেশে জন্ডিস (Jaundice) কথাটি অথবা রোগটি কমবেশি সকলের কাছেই পরিচিত।কেননা
এই রোগটি যেমন বড়দের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে ঠিক তেমনি শিশুদের ক্ষেত্রেও হয়ে থাকে।
জন্ডিস (Jaundice)কি, কেন হয়, জন্ডিসের লক্ষণ গুলো কি কি,জন্ডিসের প্রতিরোধক অথবা
চিকিৎসা কি আজ আমরা সেই বিষয় নিয়ে কিছু জানব।চলুন জেনে নেই।
পোস্ট সূচীপত্র ঃ-
জন্ডিস (Jaundice)কি বা কাকে বলে?
চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় সাধারণত চোখের সাদা অংশ, শরীরের চামড়া,হাতের তালু,পায়ের
তালু এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় থাকা মিউকাস মেমব্রেন (জিহবা,যোনি পথ ইত্যাদি) এর
মাঝে শরীরের স্বাভাবিক রঙ পরিবর্তিত হয়ে হলুদাভ রঙের পরিবর্তনকেই জন্ডিস
(Jaundice) বলে। অর্থাৎ আমাদের শরীরে বিলিরুবিন (Bilirubin) নামে যে বস্তুুটি
থাকে, যদি কোন কারণ বশত তার মাত্রা বা পরিমাণ বেড়ে যায় তাহলেই তাকে জন্ডিস
(Jaundice) বলে।
যদি আঞ্চলিক ভাষায় বলতে যাই তাহলে, যদি আমরা শরীরের ঐ নির্দিষ্ট অংশ অথবা সমস্ত
শরীরের রঙ কোন কারণ বশত স্বাভাবিকের চেয়ে হলুদাভ রঙে পরিবর্তিত হতে দেখি তাহলেই
তাকে জন্ডিস (Jaundice) বলতে পারি। সাধারণত নবজাতক বা সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি দেখা দেয়।তবে এটি বড়দেরও হয়ে থাকে।এটি মানব দেহের
লিভার বা যকৃতের এক প্রকার রোগ।
মানুষের শরীরে বিলিরুবিনের স্বাভাবিক মাত্রা (০.২ - ২ মি.গ্রা/ ডে.লি)।তবে
বাচ্চাদের একেক বয়সে একেক রকম মাত্রা স্বাভাবিক ধরা হয়।তখন বাচ্চার বয়সের সাথে
লক্ষ্য রেখে জন্ডিসের তীব্রতা বিবেচনা করা হয়।
বিস্তারিত জানতে আরও পড়ুন
শিশুদের ক্ষেত্রে জন্ডিসের (Jaundice) লক্ষণগুলো কি কি?
- চোখের সাদা অংশ এবং সমস্ত শরীরের রঙ হলুদাভ হয়ে যাওয়া
- মায়ের বুকের দুধ শক্তি দিয়ে টেনে না খাওয়া
- মায়ের বুকের দুধ খাওয়া একেবারে বন্ধ করে দেওয়া (অতিমাত্রার জন্ডিসের ক্ষেত্রে)
- বাচ্চা ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে যাওয়া
- বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা বাড়তে পারে
- বাচ্চার অতিরিক্ত কান্নাকাটি অথবা ভালভাবে কাঁদতে না পারা
- অস্বাভাবিক অঙ্গভঙ্গি বা খিঁচুনি হওয়া ইত্যাদি
উল্লেখ্য যে বড়দের ক্ষেত্রেও প্রায় একই ধরনের লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো দেখা দেয়
(যেমন) ঃ-
- চোখের সাদা অংশ এবং শরীরের আংশিক বা সমস্ত অংশের রঙ হলুদাভ রঙের হয়ে যাওয়া
- খাবার দুর্গন্ধ লাগা বা খাবারে অরুচি হওয়া
- বমিভাব থাকা অথবা বমি হওয়া
- শরীর ধীরে ধীরে দুর্বল বা নিস্তেজ হয়ে যাওয়া
- খিঁচুনি বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া (অতিমাত্রার ক্ষেত্রে) ইত্যাদি
সাধারণত কি কি কারণে শিশুদের জন্ডিস (Jaundice) হতে পারে?
এই কারণ গুলোকে আমরা দুই ভাবে উল্লেখ করতে পারি। যথা ঃ-
একটি হচ্ছে মায়ের কারণ আর অপরটি হচ্ছে শিশুর নিজেরই কারণ।চলুন জেনে নেই।
মায়ের কারণ ঃ-
- মা যদি লিভার সংক্রমনাত্তক বিভিন্ন ধরণের ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত থাকে (যেমন -হেপাটাইটিস -বি, হেপাটাইটিস -সি ইত্যাদি) তাহলে বাচ্চা জন্মগত ভাবে জন্ডিস (Jaundice) নিয়ে আসতে পারে।
- যদি কোন কারণ বশত ডেলিভারির পুরনাঙ্গ সময়ের পূর্বেই মায়ের গর্ভপাত হয়ে যায় অথবা মা বাচ্চার জন্ম দেন। তাহলে বাচ্চার জন্ডিস সহ আরও নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
বাচ্চার কারণ ঃ-
- জন্মগত ভাবে বাচ্চার ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে কম হলে (২.৫ কেজির কম হওয়া)
- বাচ্চার রক্তে অতিমাত্রার সংক্রমণ বা সেপটিসেমিয়া হলে
- মায়ের বুকের শাল দুধ না খেতে পেলে অথবা মায়ের বুকের দুধ না খেলে
- অতিরিক্ত রক্ত স্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া রোগে ভুগলে ইত্যাদি
আরও পড়ুন
শিশুদের জন্ডিস (Jaundice) প্রতিরোধ করার উপায় কি?
-
বাচ্চা মায়ের গর্ভে থাকাকালীন, মা যদি জন্ডিস বা লিভার সংক্রমনাত্তক কোন
রোগে ভোগে বা বিশেষ কোন রোগে আক্রান্ত হন, তাহলে তার যথাযথ চিকিৎসা করাতে
হবে
-
মায়ের রক্ত স্বল্পতা থাকলে সেটা চিকিৎসা বা ঠিক করা
-
সঠিক সময়ের পূর্বেই মায়ের যেন গর্ভপাত না হয়ে যায় সেজন্য বিশেষ চেষ্টা
করা বাচ্চা জন্মের সাথে সাথেই বা আধা ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধ
খাওয়ানো এবং ঘন ঘন খাওয়ানো
-
বাচ্চা কোন রোগে আক্রান্ত হলে চিকিৎসা করানো ইত্যাদি
- ভিটামিন কে (Vit-K) খাওয়ানো
শিশুদের ক্ষেত্রে জন্ডিসের (Jaundice) চিকিৎসা কি?
চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রথমেই চিন্তা করতে হবে অবশ্যই শিশুকে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে।চিকিৎসক যেভাবে নির্দেশনা দেন, সেগুলো মেনে চলতে হবে।
সংক্ষেপে চিকিৎসা সম্পর্কে যদি বলতে যাই তাহলে, চিকিৎসক সাধারণত বাচ্চার লক্ষণ বা
উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন (যেমন ঃ-antibiotic,anti
pyretic,sedative,anti convulsant ইত্যাদি)
তবে অতিমাত্রা বা তীব্র জন্ডিসের (Jaundice) এর ক্ষেত্রে চিকিৎসক সাধারণত
ফটোথেরাপি (Phototherapy) নির্দেশনা দিয়ে থাকেন।
আরও পড়ুন
ফটোথেরাপি (Phototherapy) কি বা কাকে বলে?
ফটোথেরাপি (Phototherapy) বলতে মূলত একটি বিশেষ ধরণের আলোক রশ্মিকে বোঝায়।যে আলোর
সংস্পর্শে শিশুদের শরীরের অতিরিক্ত বিলিরুবিনের মাত্রা কমতে থাকে বা জন্ডিস
(Jaundice) নিরাময় হতে থাকে।এটি একটি বিশেষ ধরণের মেশিন বা যন্ত্র।এই মেশিন বা
যন্ত্রের সাহায্যে এই আলোক রশ্মি শিশুর শরীরে লাগানো হয়।যার ফলে শিশুর শরীরের
অতিরিক্ত বিলিরুবিনের মাত্রা কমতে থাকে বা জন্ডিস (Jaundice) নিরাময় হয়।এই মেশিন
বা যন্ত্রকে আঞ্চলিক ভাষায় "আলোর ঘর" বলা হয়।
এই মেশিন বা যন্ত্রে শিশুকে কতক্ষণ রাখতে হয় বা হবে সেটা নির্ভর করে শিশুর
জন্ডিসের তীব্রতার উপর।তবে বলা যায় তীব্রতা বেশি হলে সময়টা দীর্ঘ হয়।আর তীব্রতা
কম হলে সেই সময়টাও কম হয়।
উপসংহারঃ-
জন্ডিস (Jaundice) শিশু অথবা বয়স্ক সকলের জন্য এতটি জটিল এবং প্রাণঘাতী
রোগ।এই রোগের এক বা একাধিক লক্ষণ দেখার সাথে সাথেই শিশুকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে
যেতে হবে এবং অনতিবিলম্বে চিকিৎসা সেবা শুরু করতে হবে।মনে রাখতে হবে সঠিক সময়ে
সঠিক সিদ্ধান্তই কখনো কখনো একটি জীবন বাঁচানোর জন্য মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই
সবাইকে এই বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
অনুভবের কথার নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url